) কাট্টলী সমুদ্র সৈকতঃ
বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকত বললেই প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে উঠে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার মুখ। কিন্তু এর বাহিরেও যে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। এমন একটি দৃষ্টিনন্দন আর নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত হল কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতটির নাম কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের এই সমুদ্র সৈকতটি অনেকের কাছেই অজানা। চট্টগ্রামবাসী কেউ কেউ এর খবর জানলেও বাহিরের পর্যটকরা এর খবর খুব একটা জানেন না।
এই সৈকতটির আরেকটি নাম হল জেলেপাড়া সমুদ্র সৈকত। জায়গাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য সহজেই বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। একদিকে সমুদ্র সৈকত আর একদিকে গ্রামীণ পরিবেশ অন্য কোন সৈকতে খুজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম শহর থেকে টোল সড়ক ধরে সহজেই পৌঁছুতে পারেন জায়গাটিতে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়েও এ সৈকতে আসা যায়। এ জায়গাটির নাম সাগরিকা সমুদ্র সৈকত। যারা জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসেন তাদের জন্য এই সমুদ্র সৈকতটি একটি আদর্শ ভ্রমন স্পট। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মৃতুমন্দ বাতাস, সাম্পান নৌকা, জেলেদের মাছ ধরা আর তাদের জীবনযাপন আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর সন্ধ্যার সূর্যাস্ত আপনাকে মোহাবিষ্ট করবে। এমন নিরিবিলি সূর্যাস্ত হয়তো আপনি আর কোথাও দেখতে পারবেন না। সবকিছু মিলিয়ে এটি হতে পারে আপনার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
পার্শ্ববর্তী দৃশ্যাবলী
বারুণী স্নান
কাট্টলী সমুদ্র সৈকত রানি রাসমণি বারুণী ঘাটে অসংখ্য পুণ্যার্থীর ঢল নামে। ওঁ সাধ্যাপতকহন্দ্রী সর্বদুঃখ বিনাশিনী, সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমগতি এ মন্ত্র পাঠ করে প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী নর-নারী রানি রাসমণি বারুণী স্নানঘাট এলাকায় পাপমুক্তির প্রত্যাশায় পুণ্যতোয়া বঙ্গোপসাগরে স্নান করে।
বারুণী স্নান ও মেলা পরিষদ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। নগরীর পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ মন্দাকিনী, চৌধুরীহাট ইছামতি বাড়ি, আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, রাউজানের কলমপতি দক্ষিণ হিঙ্গলা কাশখালি, পটিয়ার শ্রীমাই, বাঁশখালীর খানখানাবাদ সাগরচরসহ বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বারুনী স্নান ও মেলা উদযাপিত হয়ে থাকে।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রাম শহর হতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে পাহাড়তলী থানায়। ব্যাক্তিগত গাড়ী কিংবা সিএনজি বা মাইক্রোবাসে আসতে পারেন পাহাড়তলী। পাহাড়তলী হতে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের পাশ ঘেসে আসতে হবে টোল সড়কে। টোল সড়কের পাশেই পেয়ে যাবেন কাট্টলী সৈকত। অথবা আপনি শহর হতে টোল সড়ক ধরেও আসতে পারেন কাট্টলী।
পাহাড়তলী কিছু হোটেল রেয়েছে। চাইলে সেখানে থাকতে পারেন। অথবা চট্টগ্রাম শহরে থাকতে পারেন।
চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল আছে। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেলের যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হলো। শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় হোটেল আগ্রাবাদ (০৩১-৭১৩৩১১-৮), হোটেল পেনিনসুলা (০৩১-৬১৬৭২২, ৬১৯৮৫০) স্টেশন রোডে হোটেল এশিয়ান (০৩১-২৮৫০৩৪৬-৮, ৮০০-২০০০ টাকায় কক্ষ আছে) স্টেশন রোডে হোটেল সুপার (০৩১-৮৪১৪৫১-২, ৬০০-১৫০০ টাকায় কক্ষ আছে) খুলশী এলাকায় হোটেল লর্ডস (০৩১-২৫৫২৬৭১-৪) পাঁচলাইশ এলাকায় রওশন বোর্ডিং (০৩১-৬৫১৪১৬) জুবিলী রোডে হোটেল টাওয়ার ইন (০৩১-৮৪২৬৯১-২) এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের প্রতিটি এলাকাতেই আছে বিভিন্ন মানের হোটেল।




২ ) মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতঃ
বাংলাদেশে যে মান্দারবাড়িয়া নামে একটা সমুদ্র সৈকত আছে তা বেশীর ভাগ মানুষের কাছেই অজানা। সাতক্ষীরা জেলার হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর তীরে মান্দারবাড়িয়ায় বন আর তার সম্মুখে বঙ্গোপসাগরের তীর জুড়ে নয়নাভিরাম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত যেন প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর নৌঘাট থেকে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব আনুমানিক ৭৫ কিলোমিটার। নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়ীতে যাওয়া যায়, তার পরের পথ যেতে হবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পীড বোটে। এই ৭৫/৮০ কিলোমিটার পথের পুরাটাই সুন্দরবনের বুক চিরে যাওয়া বিভিন্ন নদী। বুঝতেই পারছেন মান্দারবাড়ীয়া কেবল মাত্র হার্ডকোর ঘুরুঞ্চিদের জন্য। মান্দারবাড়িয়ার একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন যে কোনো মানুষকেই নেশা ধরিয়ে দেবে।
নীলডুমুর ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে খোলপেটুয়া-কপোতাক্ষ নদের সঙ্গমস্থলের পাশ কাটিয়ে কলাগাছিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, মালঞ্চ নদী হয়ে পৌঁছতে হবে মান্দারবাড়িয়ায়। এই যাত্রাপথের পাশে দেখা যাবে আরো বিশাল নদী। এই নদীগুলোর উভয় পাশেই দেখা যাবে চিরহরিৎ সুন্দরবনকে। দেেখ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। এ যেন সবুজের রাজ্য। সুন্দরী, কেওড়া, বাইন, পশুর, গরান, গোলপাতা, সিংড়া, হেতাল, খলসী, গেওয়া গাছের সম্মিলনে এখানে ঘটেছে সবুজের মিলনমেলা। ম্যানগ্রোভ ফরেষ্টের শ্বাসমূল আর তাতে হরিণ সহ নানা প্রাণীর ছুটে চলা আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে। নয়ন ভরে দেখার মত েস দৃশ্য। পানকৌড়ি আর বালিহাসের উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে এক সময় পৌছে যাবেন মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে।
প্রায় ৮ কিলোমিটার লম্বা এই সমুদ্র সৈকত যেন ছবির মত । অসম্ভব ভালোলাগার আচ্ছন্নতায় মুগ্ধ। কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, ইনানী, সেন্টমার্টিন সহ বঙ্গপোসাগরের অনেকগুলো সৈকত হয়তো দেখেছেন। সুন্দরবনে এসে এত বড় একটি সৈকতের দেখা হয়ে যাবে তা হয়তো কেউ ভাবতেও পারবে না। মান্দারবাড়িয়া অন্য সৈকতগুলো হতে একেবারেই আলাদা। অপূর্ব সৌন্দর্য ঘেরা এক জায়গা। পিছনে বাঘের ভয় আর সামনে অসম্ভব ভালোলাগার হাতছানি দেয়া সমুদ্র, বিস্তীর্ণ সৈকত, সবুজ রহস্যে ঘেরা বন। পর্যটকেরা এখানে নির্জন সৈকতে নিজেকে নষ্টালজিয়ার জালে জড়িয়ে খুঁজতে থাকবেন ভিন্ন এক অনুভূতি। সৈকতের বুকে হরিণ আর বাঘের পায়ের ছাপ েস সম্মোহনকে আরও বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুন। তাই যারা ভ্রমন বিলাসী, ঘুরুঞ্চি আর এ্যাডভেঞ্চার করত আগ্রহী তারা ঘুরে আসুন দেশের অজানার সুন্দর সৈকত মান্দারবাড়িয়া থেকে আর নিজের নামটা লিখিয়ে রাখুন নতুনদের তালিকায়।
যেভাবে যেতে হবেঃ
ঢাকার শ্যামলী থেকে সাতক্ষীরার বাস ধরে সাতক্ষীরা/শ্যামনগর যেতে হবে। সাতক্ষীরা সদর থেকে বুড়িগোয়ালীনি ৭০ কিলোমিটার। সহজে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুরস্থ নৌঘাট থেকে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্টিমার বোটে করে শীত মৌসুমে (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) সময়ে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে। স্টিমার বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬/৭ ঘণ্টা। স্পিড বোট যোগে বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর থেকে মান্দারবাড়িয়া পৌঁছাতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেনঃ
থাকতে হবে সাতক্ষীরার কোন হোটেলে কিংবা শ্যামনগর রেষ্ট হাউজে।




৩ ) সোনারচর সমুদ্র সৈকতঃ
বাংলাদেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরে আর একটি সৈকতের নাম জানতে চাইলে সবাই এক বাক্যে বলবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। কিন্তু দেশের বেশীর ভাগ লোকই জানেন না যে এই জেলাতেই রয়েছে আমাদের দেশের আর একটি দৃষ্টিনন্দন ও নয়ানাভিরাম সমুদ্র সৈকত। নাম সোনারচর সমুদ্র সৈকত।
পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটার এবং গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরের মাঝ বরাবরে এর অবস্থান। গত কয়েক বছরে পর্যটকদের কাছে সোনার চর বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিপদসঙ্কুল দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা উপেক্ষা করে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে অনেকেই যাচ্ছে সোনার চরে। সাগরের উত্তাল ঢেউ। জেলেদের মাছ ধরা। বিশাল বনাঞ্চল ছাড়াও সেখানে দেখার আছে অনেক কিছু। বিশেষ করে প্রায় দশ কিলোমিটার লম্বা বিশাল সমুদ্র সৈকত জুড়ে কোটি কোটি লাল কাঁকড়ার বিচরণ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দেখে মনে হবে যেন লাল কাঁকড়ার ভিন্ন এক জগত। গোটা সৈকত লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে সড়কপথে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে পানপট্টি লঞ্চঘাট। সেখান থেকে সামনে এগিয়ে গেলেই আগুনমুখা মোহনা। ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে আগুনমুখা মোহনা থেকে ঘণ্টা তিনেক এগুলেই চোখে পড়বে মায়াবী দ্বীপচর তাপসী। তাপসীর বাঁকে পৌঁছাতেই সোনারচরের হাতছানি। তাপসী থেকে ৩০ মিনিটের পথ সামনে এগুলেই সোনারচর। প্রায় ১০ কিমি দীর্ঘ একটি অনন্য সুন্দর চোখ জুড়ানো সমুদ্রসৈকত।
বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ পর্যটকই পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ঘুরে চলে যান। কিন্তু সোনারচর, রূপারচর ও চরহেয়ারসহ সমুদ্র ফুলে জেগে ওঠা সবুজ বনাঞ্চলের সন্ধান জানেন না অনেকেই। সাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের দ্বীপ সোনারচর। এ দ্বীপের একই জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায় সূর্যের উদয়াঅস্ত। এর চারদিকেই দিগন্ত-বিস্তৃত সাগরের অথৈ নীল জলরাশি। উথালপাতাল ঢেউ দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে জোয়ারের সময় আছড়ে পড়ে দৃষ্টিনন্দনভাবে। ভোরের সূর্য কোমল আলো ছড়ায় সোনারচরের চিক চিক বালুকণায়। অস্তগামী সূর্যের লালিমা তেমনি মায়া ঢালে নিভৃতের আঁধারে। অপরূপ সৌন্দর্যের আধার সোনারচর বর্ণিল শোভায় ঘেরা। দূর থেকে মনে হয় কোনো শিল্পীর হাতে আঁকা নিপুণ ছবি। প্রকৃতি যেন অকৃপণ হাতে উজাড় করে সৃষ্টি করেছেন এ দ্বীপটিকে।
নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এক আধার এই সোনারচর সমুদ্র সৈকত। শেষ বিকালের রোদের আলো যখন সোনারচরের বেলেভূমিতে পড়ে, তখন পুরো দ্বীপটাকেই মনে হবে যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দেয়া একটি সোনালি থালা। সাগরে যখন জোয়ারের পানি উথলে ওঠে, তখন অন্য এক সৌন্দর্য বিকশিত হয় সোনারচরে। তটরেখায় আছড়ে পড়ে ছোট-বড় ঢেউ। গলে পড়ে ঝুরঝুরে বালি। লোনাপানিতে ঘন সবুজ অরণ্যের নিবিড় ছাউনি।
ইতিহাসঃ
সোনারচরে সোনা নেই ঠিকই কিন্তু আছে সোনার অঙ্গের বালি। সূর্যের প্রখর রোদ যখন বালির উপর পরে দূর থেকে তা দেখতে সোনার মতই। এভাবে ৩০ এর দশকে জেগে ওঠা অপার সম্ভাবনা সৌন্দর্যের দ্বীপটির নাম পাল্টে গিয়ে হয় সোনারচর।
আশেপাশে যা পাবেনঃ
ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট
এখানে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও আছে ৫ হাজার একরের বিশাল বনভূমি। গলাচিপা উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, সুন্দরবনের পরই আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। সোনারচরের বিশাল বনভূমির মধ্যে ছড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক ছোট-বড় খাল। ছোট্ট নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে এসব খালে ভেসে ভেসে দেখা যায় বিচিত্র সব পাখ-পাখালির বিচরণ। তবে ভয় নেই। একমাত্র শিয়াল আর মেছোবাঘ ছাড়া হিংস্র কোনো জন্তু নেই এখানে।
বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হয়তো সহজেই চোখে পড়বে বুনো মোষ। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা হতে পারে হরিণ পালের সঙ্গে। এখানে রয়েছে শূকর, বানর, মেছোবাঘসহ অন্যসব বন্যপ্রাণী। এসব দেখতে হলে খুব সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে। দেখতে পারবেন সমুদ্রগামী হাজারো জেলের জীবনসংগ্রাম। পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে একটি ডাকবাংলো এবং বন বিভাগের ক্যাম্প।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত
এখানে আছে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। এখন আর কুয়াকাটাই একমাত্র সমুদ্র সৈকত নয় যেখানে একই স্থান হতে সূযোর্দয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। সোনারচর সমুদ্র সৈকতও এইক রূপে অপরূপা। এখানেও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের এক অপুলক দৃশ্য।
লাল কাঁকড়ার গালিচা
সোনারচরের আর একটি আকর্ষনীয় দিক হল সৈকত পাড়ের লাল কাঁকড়া। প্রায় দশ কিলোমিটার লম্বা বিশাল সমুদ্র সৈকত জুড়ে কোটি কোটি লাল কাঁকড়ার বিচরণ। দেখে মনে হবে যেন এ এক লাল কাঁকড়ার বিশাল রাজ্য। গোটা সৈকত লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। কাঁকড়ার এ প্রজাতিটি সামুদ্রিক প্রাণী হলেও চরের বালুমাটিতেই বাস করে। বালুমাটির গভীরে তৈরি সুড়ঙ্গে দলবেঁধে চলাচল করে। সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে গোটা সৈকত যখন ডুবে যায়, তখন ওরা নিরাপদ আশ্রয় নেয় সেই সুড়ঙ্গে। লাল কাঁকড়ার অবাধ চলাচল যতই চোখ জুড়াক না কেন ওদের ধরা কিন্তু ততটা সহজ নয়। মানুষের শব্দ পেলেই ওরা নিজেদের তৈরি সুড়ঙ্গের ভেতর লুকিয়ে যায়। যে কারণে কম করে হলেও ১০/২০ ফুট দূর থেকেই লাল কাঁকড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়। সমুদ্রের কাঁকড়া বেশ সুস্বাদু হলেও এ প্রজাতিটি যথেষ্ট বিষাক্ত। যে কারণে এটিকে কেউ ধরে না বা নিধন করে না। ওরা গর্ত বা সুড়ঙ্গ করার সময়ে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করেও এক অপূর্ব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করে। যা দেখে মনে হবে যেন কোন শিল্পী তার নিপুণ হাতে মাটিতে অাঁচড় দিয়েছে। পর্যটকদের কাছে সোনারচরের লাল কাঁকড়ার এ রাজত্ব আরেকটি দর্শণীয় বিষয়। একবার ঘুরে এলেই এর প্রমাণ মিলবে।
যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সুবিধাজনক লঞ্চ উপায়ে কিংবা বাসে করে পটুয়াখালী। লঞ্চই উত্তম পন্থা। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে সড়কপথে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে পানপট্টি লঞ্চঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে আগুনমুখা মোহনা পেরিয়ে দক্ষিণে যাত্রা। ডিগ্রি নদীর বুক চিরে একটু বাঁয়ে যেতেই আরেকটি নদী—বুড়া গৌরাঙ্গ। সামনে গিয়ে বাঁক ঘুরতেই দাঁড়ছিড়া নদী। দু’পাশে সারি সারি ঘন ম্যানগ্রোভ বাগান। নদীর বুকজুড়ে গাংশালিকের অবাধ বিচরণ। সামুদ্রিক হাওয়ার মৃদুমন্দ ছোঁয়া। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি। ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে আগুনমুখা মোহনা থেকে ঘণ্টা তিনেক এগুলেই চোখে পড়বে মায়াবী দ্বীপচর তাপসী। তাপসীর বাঁকে পৌঁছাতেই সোনারচরের হাতছানি। তাপসী থেকে ৩০ মিনিটের পথ সামনে এগুলেই সোনারচর।
যেখানে থাকবেনঃ
থাকতে হবে পটুয়াখালী শহরে কিংবা গলাচিপায়। এখানে বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে।



৪ ) চরগঙ্গামাতি সমুদ্র সৈকতঃ
চরগঙ্গামাতি। কুয়াকাটা সংলগ্ন একটি সৈকত। বনভূমির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা লীলাভূমি। সৈকত ঘেষা বালুকা বেলার একই স্থানে দাড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিনই দেশী বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। চরগঙ্গামাতি পর্যটকদের কাছে এখন অন্যতম ভ্রমনের স্পট হয়ে দাড়িয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার সমুদ্র তীরবর্তী কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের চরগঙ্গামতি এলাকায় এর অবস্থান। দু’হাজার একরেরও বেশি খাস জমি নিয়ে বিশাল সমূদ্র বেলাভুমি। এখানে রয়েছে বনবিভাগের এগারশ একর জমি নিয়ে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সমূদ্র সৈকত কুয়াকাটা থেকে মাত্র ৫ মিলোমিটার পূর্ব দিকে সমূদ্রের কোল ঘেষেই চরগঙ্গামতি। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে বালিয়াতলী হয়ে কুয়াকাটা-কলাপাড়া বিকল্প সড়কের একটি মাত্র ফেরী পাড় হয়ে চরগঙ্গামতী যাওয়া যায়।
চরগঙ্গামতি সংলগ্ন মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে শত বছরের পুরানো এশিয়ার সু-উচ্চ বৌদ্ধ বিহার।এর কাছাকাছি রয়েছে রাখাইনদের বৌলতলীপাড়া। এই পড়ায় রয়েছে অলৌকিক একটি ঘটনা। যা আজও এখানকার স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। মুন্সিগঞ্জ এলাকার এক সাপুড়ে সরদার আবদুল আলী গারুলীকে রাতে স্বপ্নে দেখেন যে, বৌলতলী রাখাইন পাড়ার উত্তর পশ্চিম পাশে ৩শ’ ৬০ টি বাশের একটি ঝাড়ের নিচে একটি সাপ রয়েছে। স্বপ্নে বলে দেয় ওই সাপ ধরার আগে দু’টি পাঠা পুঁজো করে নিতে হবে। আবদুল আলী গারুলী ওই স্বপনের কথা আর মানলেন না। সে সাপ ধরতে যায়। সাপটিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে রেগে গারুলীকে মুখে নিয়ে ৩শ’ ৬০ টি বাঁশের সঙ্গে পেচিয়ে রাখে। সাপটি যে গর্তে ছিল তা আজও কালের স্বাক্ষী হিসাবে রয়েছে।
কলাপাড়া পৌর শহর থেকে চরগঙ্গামতির দুরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার। একটি মাত্র ফেরি পাড় হয়ে যেতে হয়। অপরদিকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার দুরত্ব ও ২১ কিলোমিটার। কলাপাড়া পৌর শহর থেকে এই ২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তিনটি ফেরি পাড় হতে হয়।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে সাকুরা পরিবহন ছাড়াও বিআরটিসি পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকায় যায়। আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা।
যারা নদী পথে যেতে চান তারা ঢাকা সদরঘাট হতে পটুয়াখালীর লঞ্চে করে চলে যেতে পারেন পটুয়াখালী আর সেখানথেকে বাসে করে সোজা কুয়াকাটা। এটি সর্বাধিক আরামের ভ্রমন। কেননা ঢাকা থেকে পটুয়াখলী পর্যন্ত অন্তত একটি বিলাশবহুল আর আয়েশের ভ্রমন দিতে পারবেন। যারা কখনো লঞ্চে ভ্রমন করেননি তাদের জন্য এটি হবে একটি উল্লেখযোগ্য ভ্রমন।
আর উত্তরবঙ্গ থেকে আসতে চাইলে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে আসতে পারবেন। রাত্রের টে্রনে আসলে সকাল ৭ টার বিআরটিসি বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।
কলাপাড়া পৌর শহর থেকে চরগঙ্গামতির দুরত্ব ২১ কিলোমিটার আর কুয়াকাটা সৈকত হতে মাত্র ৫ কিলোমিটার। মোটারসাইল নিয়ে খুব সহজেই চলে যাওয়া যায় সেখানে।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
কুয়াকাটা




৫ ) লালদিয়া বন ও সমুদ্র সৈকতঃ
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে লালদিয়ার বন। সুন্দরবনের হরিণঘাটার মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে বন পার হয়ে গেলে পাওয়া যায় এই লালদিয়া। এ বনের পূর্বে বিশখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী । দুই নদী ও সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে । বন সংলগ্ন পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতটি বেশ ছোট। তবে ছোট হলেও সৌন্দর্য কোন অংশে কমতি নেই। এখানে বিভিন্ন রকমের পাখির কলকাকলি এবং সমুদ্রের গর্জন শুনে পর্যটকরা হবেন বিমোহিত এবং ফিরে আসবেন বারে বারে। এখানে সাগরের নোনা জল এসে আছড়ে পরছে বালুকাবেলায়। উড়ে যায় গাংচিল আর হাজার হাজার লাল কাকড়ার দল ছুড়ে বেড়ায় বেলাভুমিতে। সে এক নান্দনিক দৃশ্য। মনকাড়া অনুভুতি যা আপনাকে আবারও কাছে টানবে বার বার।
লালদিয়া সৈকতের পাশেই রয়েছে একটি শুটকি পল্লী। সৈকত ঘেরা লালদিয়ার চরে বছরে কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে শুঁটকি চাষ। এখানে যে শুঁটকি প্রস্তুত করা হয় তার ৯০ ভাগই হয় হাঁস-মুরগির খাদ্যের জন্য, বাকি ১০ ভাগ আমরা খাই। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শুঁটকির কারবার চলে আসছে।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা হতে সড়ক ও নৌ উভয় পথেই বরগুনা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন সকাল এবং রাতে উভয় সময় ছেড়ে যায়। দ্রুতি পরিবহন(০১১৯৬০৯৫০৩৩) সকাল সাড়ে ৮টায় এবং একই সময় রাতে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, সাকুরা পরিবহন(০১১৯০৬৫৮৭৭২, ০১৭২৫০৬০০৩৩) গাবতলী থেকে সকাল এবং রাত পৌনে ৯টায় এবং সায়েদাবাদ বাসস্টান্ড থেকে সকাল ও রাত সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যায় এছাড়াও আবদুল্লাহ পরিবহনসহ(০১৭১০৬২৫৮০৯)বেশ কয়েকটি পরিবহন ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচল করে। আপনি চাইলে নদী পথেও বরগুনা যেতে পারেন। একদিন পর পর ‘এম ভি বন্ধন-৭’(০১৮২১১৬৫৮৭৫) নামে একটি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাট নদীবন্দর থেকে বরগুনা যায়। লঞ্চই আরামদায়ক বাহন।
বরগুনা হতে ট্রলার কিংবা নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যায় লালদিয়া বনে। অথবা সুন্দরবনের হরিণঘাটা দিয়ে হেটেও যাওয়া যায় লালদিয়া বন ও সমুদ্র সৈকতে। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা হতে পারে।
কোথায় থাকবেন
আমতলী উপজেলায় ভাল মানের তেমন কোন হোটেল নেই। থাকতে হবে বরগুনা শহরে। বরগুনায় রাত্রিযাপন ব্যবস্থা খুবই ভাল। অনেকগুলি রেস্ট হাউস আছে এছাড়া আছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।
রেস্ট হাউস জেলা পরিষদ ডাকবাংলো(০৪৪৮-৬২৪১০)
খামারবাড়ী রেস্ট হাউস(০৪৪৮-৬২৪৬৯)
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস(০৪৪৮-৬২৫৫১)
এ্যাগ্রো সার্ভিস সেন্টার(০৪৪৮-৬২৭২৮)
গণপূর্ত বিভাগ(০৪৪৮-৬২৫০৫)
রেস্ট হাউস এল.জি.ই.ডি রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৪২)
সিইআরপি রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৫১)।
এছাড়া বরগুনায় আছে একাধিক আবাসিক হোটেল
হোটেল তাজবিন(০৪৪৮-৬২৫০৩)
বরগুনা রেস্ট হাউস(০১৭১৮৫৮৮৮৫৬)
হোটেল আলম(০৪৪৮-৬২২৩৪)
হোটেল বসুন্ধরা(০৭১২৬৪৫৩০০৭)
হোটেল মৌমিতা(০৪৪৮-৬২৮৪২)
হোটেল ফাল্গুনী (০৪৪৮-৬২৭৩৩)।
তবে লালদিয়া থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব মাত্র ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার। সুতরাং ইচ্ছে করলে কুয়াকাটাও থাকতে পারেন। কুয়াকাটা থাকাই সবচেয়ে উত্তম। তাতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটাও দেখা হয়ে যাবে।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
সোনাকাটা বা টেংরাগিরি বন
আমার লেখা অন্যান্য পোস্টগুলিঃ
~~~ ট্রাভেল বাংলাদেশ ~~~
কবিতা সমূহ
গল্প সমূহ
রম্য সমূহ
রহস্য / ভৌতিক / হরর গল্প সমূহ
নিচের ছবিগুলো বড় করে দেখতে হবে , উপরের মত বড় করে ছবি আপলোড হচ্ছে না ।
ছবিগুলো বড় করে না দেখলে পস্তাবেন । আমাদের দেশ যে কত সুন্দর তা অকল্পনীয়
সুত্রঃ ইন্টারনেট ।
বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকত বললেই প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে উঠে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার মুখ। কিন্তু এর বাহিরেও যে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। এমন একটি দৃষ্টিনন্দন আর নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত হল কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতটির নাম কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের এই সমুদ্র সৈকতটি অনেকের কাছেই অজানা। চট্টগ্রামবাসী কেউ কেউ এর খবর জানলেও বাহিরের পর্যটকরা এর খবর খুব একটা জানেন না।
এই সৈকতটির আরেকটি নাম হল জেলেপাড়া সমুদ্র সৈকত। জায়গাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য সহজেই বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। একদিকে সমুদ্র সৈকত আর একদিকে গ্রামীণ পরিবেশ অন্য কোন সৈকতে খুজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম শহর থেকে টোল সড়ক ধরে সহজেই পৌঁছুতে পারেন জায়গাটিতে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়েও এ সৈকতে আসা যায়। এ জায়গাটির নাম সাগরিকা সমুদ্র সৈকত। যারা জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসেন তাদের জন্য এই সমুদ্র সৈকতটি একটি আদর্শ ভ্রমন স্পট। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মৃতুমন্দ বাতাস, সাম্পান নৌকা, জেলেদের মাছ ধরা আর তাদের জীবনযাপন আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর সন্ধ্যার সূর্যাস্ত আপনাকে মোহাবিষ্ট করবে। এমন নিরিবিলি সূর্যাস্ত হয়তো আপনি আর কোথাও দেখতে পারবেন না। সবকিছু মিলিয়ে এটি হতে পারে আপনার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
পার্শ্ববর্তী দৃশ্যাবলী
বারুণী স্নান
কাট্টলী সমুদ্র সৈকত রানি রাসমণি বারুণী ঘাটে অসংখ্য পুণ্যার্থীর ঢল নামে। ওঁ সাধ্যাপতকহন্দ্রী সর্বদুঃখ বিনাশিনী, সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমগতি এ মন্ত্র পাঠ করে প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী নর-নারী রানি রাসমণি বারুণী স্নানঘাট এলাকায় পাপমুক্তির প্রত্যাশায় পুণ্যতোয়া বঙ্গোপসাগরে স্নান করে।
বারুণী স্নান ও মেলা পরিষদ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। নগরীর পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ মন্দাকিনী, চৌধুরীহাট ইছামতি বাড়ি, আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, রাউজানের কলমপতি দক্ষিণ হিঙ্গলা কাশখালি, পটিয়ার শ্রীমাই, বাঁশখালীর খানখানাবাদ সাগরচরসহ বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বারুনী স্নান ও মেলা উদযাপিত হয়ে থাকে।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রাম শহর হতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে পাহাড়তলী থানায়। ব্যাক্তিগত গাড়ী কিংবা সিএনজি বা মাইক্রোবাসে আসতে পারেন পাহাড়তলী। পাহাড়তলী হতে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের পাশ ঘেসে আসতে হবে টোল সড়কে। টোল সড়কের পাশেই পেয়ে যাবেন কাট্টলী সৈকত। অথবা আপনি শহর হতে টোল সড়ক ধরেও আসতে পারেন কাট্টলী।
পাহাড়তলী কিছু হোটেল রেয়েছে। চাইলে সেখানে থাকতে পারেন। অথবা চট্টগ্রাম শহরে থাকতে পারেন।
চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল আছে। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেলের যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হলো। শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় হোটেল আগ্রাবাদ (০৩১-৭১৩৩১১-৮), হোটেল পেনিনসুলা (০৩১-৬১৬৭২২, ৬১৯৮৫০) স্টেশন রোডে হোটেল এশিয়ান (০৩১-২৮৫০৩৪৬-৮, ৮০০-২০০০ টাকায় কক্ষ আছে) স্টেশন রোডে হোটেল সুপার (০৩১-৮৪১৪৫১-২, ৬০০-১৫০০ টাকায় কক্ষ আছে) খুলশী এলাকায় হোটেল লর্ডস (০৩১-২৫৫২৬৭১-৪) পাঁচলাইশ এলাকায় রওশন বোর্ডিং (০৩১-৬৫১৪১৬) জুবিলী রোডে হোটেল টাওয়ার ইন (০৩১-৮৪২৬৯১-২) এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের প্রতিটি এলাকাতেই আছে বিভিন্ন মানের হোটেল।
২ ) মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতঃ
বাংলাদেশে যে মান্দারবাড়িয়া নামে একটা সমুদ্র সৈকত আছে তা বেশীর ভাগ মানুষের কাছেই অজানা। সাতক্ষীরা জেলার হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর তীরে মান্দারবাড়িয়ায় বন আর তার সম্মুখে বঙ্গোপসাগরের তীর জুড়ে নয়নাভিরাম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত যেন প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর নৌঘাট থেকে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব আনুমানিক ৭৫ কিলোমিটার। নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়ীতে যাওয়া যায়, তার পরের পথ যেতে হবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পীড বোটে। এই ৭৫/৮০ কিলোমিটার পথের পুরাটাই সুন্দরবনের বুক চিরে যাওয়া বিভিন্ন নদী। বুঝতেই পারছেন মান্দারবাড়ীয়া কেবল মাত্র হার্ডকোর ঘুরুঞ্চিদের জন্য। মান্দারবাড়িয়ার একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন যে কোনো মানুষকেই নেশা ধরিয়ে দেবে।
নীলডুমুর ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে খোলপেটুয়া-কপোতাক্ষ নদের সঙ্গমস্থলের পাশ কাটিয়ে কলাগাছিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, মালঞ্চ নদী হয়ে পৌঁছতে হবে মান্দারবাড়িয়ায়। এই যাত্রাপথের পাশে দেখা যাবে আরো বিশাল নদী। এই নদীগুলোর উভয় পাশেই দেখা যাবে চিরহরিৎ সুন্দরবনকে। দেেখ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। এ যেন সবুজের রাজ্য। সুন্দরী, কেওড়া, বাইন, পশুর, গরান, গোলপাতা, সিংড়া, হেতাল, খলসী, গেওয়া গাছের সম্মিলনে এখানে ঘটেছে সবুজের মিলনমেলা। ম্যানগ্রোভ ফরেষ্টের শ্বাসমূল আর তাতে হরিণ সহ নানা প্রাণীর ছুটে চলা আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে। নয়ন ভরে দেখার মত েস দৃশ্য। পানকৌড়ি আর বালিহাসের উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে এক সময় পৌছে যাবেন মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে।
প্রায় ৮ কিলোমিটার লম্বা এই সমুদ্র সৈকত যেন ছবির মত । অসম্ভব ভালোলাগার আচ্ছন্নতায় মুগ্ধ। কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, ইনানী, সেন্টমার্টিন সহ বঙ্গপোসাগরের অনেকগুলো সৈকত হয়তো দেখেছেন। সুন্দরবনে এসে এত বড় একটি সৈকতের দেখা হয়ে যাবে তা হয়তো কেউ ভাবতেও পারবে না। মান্দারবাড়িয়া অন্য সৈকতগুলো হতে একেবারেই আলাদা। অপূর্ব সৌন্দর্য ঘেরা এক জায়গা। পিছনে বাঘের ভয় আর সামনে অসম্ভব ভালোলাগার হাতছানি দেয়া সমুদ্র, বিস্তীর্ণ সৈকত, সবুজ রহস্যে ঘেরা বন। পর্যটকেরা এখানে নির্জন সৈকতে নিজেকে নষ্টালজিয়ার জালে জড়িয়ে খুঁজতে থাকবেন ভিন্ন এক অনুভূতি। সৈকতের বুকে হরিণ আর বাঘের পায়ের ছাপ েস সম্মোহনকে আরও বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুন। তাই যারা ভ্রমন বিলাসী, ঘুরুঞ্চি আর এ্যাডভেঞ্চার করত আগ্রহী তারা ঘুরে আসুন দেশের অজানার সুন্দর সৈকত মান্দারবাড়িয়া থেকে আর নিজের নামটা লিখিয়ে রাখুন নতুনদের তালিকায়।
যেভাবে যেতে হবেঃ
ঢাকার শ্যামলী থেকে সাতক্ষীরার বাস ধরে সাতক্ষীরা/শ্যামনগর যেতে হবে। সাতক্ষীরা সদর থেকে বুড়িগোয়ালীনি ৭০ কিলোমিটার। সহজে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুরস্থ নৌঘাট থেকে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্টিমার বোটে করে শীত মৌসুমে (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) সময়ে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে। স্টিমার বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬/৭ ঘণ্টা। স্পিড বোট যোগে বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর থেকে মান্দারবাড়িয়া পৌঁছাতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেনঃ
থাকতে হবে সাতক্ষীরার কোন হোটেলে কিংবা শ্যামনগর রেষ্ট হাউজে।
৩ ) সোনারচর সমুদ্র সৈকতঃ
বাংলাদেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরে আর একটি সৈকতের নাম জানতে চাইলে সবাই এক বাক্যে বলবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। কিন্তু দেশের বেশীর ভাগ লোকই জানেন না যে এই জেলাতেই রয়েছে আমাদের দেশের আর একটি দৃষ্টিনন্দন ও নয়ানাভিরাম সমুদ্র সৈকত। নাম সোনারচর সমুদ্র সৈকত।
পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটার এবং গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরের মাঝ বরাবরে এর অবস্থান। গত কয়েক বছরে পর্যটকদের কাছে সোনার চর বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিপদসঙ্কুল দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা উপেক্ষা করে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে অনেকেই যাচ্ছে সোনার চরে। সাগরের উত্তাল ঢেউ। জেলেদের মাছ ধরা। বিশাল বনাঞ্চল ছাড়াও সেখানে দেখার আছে অনেক কিছু। বিশেষ করে প্রায় দশ কিলোমিটার লম্বা বিশাল সমুদ্র সৈকত জুড়ে কোটি কোটি লাল কাঁকড়ার বিচরণ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দেখে মনে হবে যেন লাল কাঁকড়ার ভিন্ন এক জগত। গোটা সৈকত লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে সড়কপথে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে পানপট্টি লঞ্চঘাট। সেখান থেকে সামনে এগিয়ে গেলেই আগুনমুখা মোহনা। ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে আগুনমুখা মোহনা থেকে ঘণ্টা তিনেক এগুলেই চোখে পড়বে মায়াবী দ্বীপচর তাপসী। তাপসীর বাঁকে পৌঁছাতেই সোনারচরের হাতছানি। তাপসী থেকে ৩০ মিনিটের পথ সামনে এগুলেই সোনারচর। প্রায় ১০ কিমি দীর্ঘ একটি অনন্য সুন্দর চোখ জুড়ানো সমুদ্রসৈকত।
বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ পর্যটকই পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ঘুরে চলে যান। কিন্তু সোনারচর, রূপারচর ও চরহেয়ারসহ সমুদ্র ফুলে জেগে ওঠা সবুজ বনাঞ্চলের সন্ধান জানেন না অনেকেই। সাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের দ্বীপ সোনারচর। এ দ্বীপের একই জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায় সূর্যের উদয়াঅস্ত। এর চারদিকেই দিগন্ত-বিস্তৃত সাগরের অথৈ নীল জলরাশি। উথালপাতাল ঢেউ দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে জোয়ারের সময় আছড়ে পড়ে দৃষ্টিনন্দনভাবে। ভোরের সূর্য কোমল আলো ছড়ায় সোনারচরের চিক চিক বালুকণায়। অস্তগামী সূর্যের লালিমা তেমনি মায়া ঢালে নিভৃতের আঁধারে। অপরূপ সৌন্দর্যের আধার সোনারচর বর্ণিল শোভায় ঘেরা। দূর থেকে মনে হয় কোনো শিল্পীর হাতে আঁকা নিপুণ ছবি। প্রকৃতি যেন অকৃপণ হাতে উজাড় করে সৃষ্টি করেছেন এ দ্বীপটিকে।
নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এক আধার এই সোনারচর সমুদ্র সৈকত। শেষ বিকালের রোদের আলো যখন সোনারচরের বেলেভূমিতে পড়ে, তখন পুরো দ্বীপটাকেই মনে হবে যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দেয়া একটি সোনালি থালা। সাগরে যখন জোয়ারের পানি উথলে ওঠে, তখন অন্য এক সৌন্দর্য বিকশিত হয় সোনারচরে। তটরেখায় আছড়ে পড়ে ছোট-বড় ঢেউ। গলে পড়ে ঝুরঝুরে বালি। লোনাপানিতে ঘন সবুজ অরণ্যের নিবিড় ছাউনি।
ইতিহাসঃ
সোনারচরে সোনা নেই ঠিকই কিন্তু আছে সোনার অঙ্গের বালি। সূর্যের প্রখর রোদ যখন বালির উপর পরে দূর থেকে তা দেখতে সোনার মতই। এভাবে ৩০ এর দশকে জেগে ওঠা অপার সম্ভাবনা সৌন্দর্যের দ্বীপটির নাম পাল্টে গিয়ে হয় সোনারচর।
আশেপাশে যা পাবেনঃ
ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট
এখানে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও আছে ৫ হাজার একরের বিশাল বনভূমি। গলাচিপা উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, সুন্দরবনের পরই আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। সোনারচরের বিশাল বনভূমির মধ্যে ছড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক ছোট-বড় খাল। ছোট্ট নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে এসব খালে ভেসে ভেসে দেখা যায় বিচিত্র সব পাখ-পাখালির বিচরণ। তবে ভয় নেই। একমাত্র শিয়াল আর মেছোবাঘ ছাড়া হিংস্র কোনো জন্তু নেই এখানে।
বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হয়তো সহজেই চোখে পড়বে বুনো মোষ। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা হতে পারে হরিণ পালের সঙ্গে। এখানে রয়েছে শূকর, বানর, মেছোবাঘসহ অন্যসব বন্যপ্রাণী। এসব দেখতে হলে খুব সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে। দেখতে পারবেন সমুদ্রগামী হাজারো জেলের জীবনসংগ্রাম। পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে একটি ডাকবাংলো এবং বন বিভাগের ক্যাম্প।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত
এখানে আছে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। এখন আর কুয়াকাটাই একমাত্র সমুদ্র সৈকত নয় যেখানে একই স্থান হতে সূযোর্দয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। সোনারচর সমুদ্র সৈকতও এইক রূপে অপরূপা। এখানেও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের এক অপুলক দৃশ্য।
লাল কাঁকড়ার গালিচা
সোনারচরের আর একটি আকর্ষনীয় দিক হল সৈকত পাড়ের লাল কাঁকড়া। প্রায় দশ কিলোমিটার লম্বা বিশাল সমুদ্র সৈকত জুড়ে কোটি কোটি লাল কাঁকড়ার বিচরণ। দেখে মনে হবে যেন এ এক লাল কাঁকড়ার বিশাল রাজ্য। গোটা সৈকত লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। কাঁকড়ার এ প্রজাতিটি সামুদ্রিক প্রাণী হলেও চরের বালুমাটিতেই বাস করে। বালুমাটির গভীরে তৈরি সুড়ঙ্গে দলবেঁধে চলাচল করে। সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে গোটা সৈকত যখন ডুবে যায়, তখন ওরা নিরাপদ আশ্রয় নেয় সেই সুড়ঙ্গে। লাল কাঁকড়ার অবাধ চলাচল যতই চোখ জুড়াক না কেন ওদের ধরা কিন্তু ততটা সহজ নয়। মানুষের শব্দ পেলেই ওরা নিজেদের তৈরি সুড়ঙ্গের ভেতর লুকিয়ে যায়। যে কারণে কম করে হলেও ১০/২০ ফুট দূর থেকেই লাল কাঁকড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়। সমুদ্রের কাঁকড়া বেশ সুস্বাদু হলেও এ প্রজাতিটি যথেষ্ট বিষাক্ত। যে কারণে এটিকে কেউ ধরে না বা নিধন করে না। ওরা গর্ত বা সুড়ঙ্গ করার সময়ে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করেও এক অপূর্ব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করে। যা দেখে মনে হবে যেন কোন শিল্পী তার নিপুণ হাতে মাটিতে অাঁচড় দিয়েছে। পর্যটকদের কাছে সোনারচরের লাল কাঁকড়ার এ রাজত্ব আরেকটি দর্শণীয় বিষয়। একবার ঘুরে এলেই এর প্রমাণ মিলবে।
যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সুবিধাজনক লঞ্চ উপায়ে কিংবা বাসে করে পটুয়াখালী। লঞ্চই উত্তম পন্থা। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে সড়কপথে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে পানপট্টি লঞ্চঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে আগুনমুখা মোহনা পেরিয়ে দক্ষিণে যাত্রা। ডিগ্রি নদীর বুক চিরে একটু বাঁয়ে যেতেই আরেকটি নদী—বুড়া গৌরাঙ্গ। সামনে গিয়ে বাঁক ঘুরতেই দাঁড়ছিড়া নদী। দু’পাশে সারি সারি ঘন ম্যানগ্রোভ বাগান। নদীর বুকজুড়ে গাংশালিকের অবাধ বিচরণ। সামুদ্রিক হাওয়ার মৃদুমন্দ ছোঁয়া। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি। ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে আগুনমুখা মোহনা থেকে ঘণ্টা তিনেক এগুলেই চোখে পড়বে মায়াবী দ্বীপচর তাপসী। তাপসীর বাঁকে পৌঁছাতেই সোনারচরের হাতছানি। তাপসী থেকে ৩০ মিনিটের পথ সামনে এগুলেই সোনারচর।
যেখানে থাকবেনঃ
থাকতে হবে পটুয়াখালী শহরে কিংবা গলাচিপায়। এখানে বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে।
৪ ) চরগঙ্গামাতি সমুদ্র সৈকতঃ
চরগঙ্গামাতি। কুয়াকাটা সংলগ্ন একটি সৈকত। বনভূমির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা লীলাভূমি। সৈকত ঘেষা বালুকা বেলার একই স্থানে দাড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিনই দেশী বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। চরগঙ্গামাতি পর্যটকদের কাছে এখন অন্যতম ভ্রমনের স্পট হয়ে দাড়িয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার সমুদ্র তীরবর্তী কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের চরগঙ্গামতি এলাকায় এর অবস্থান। দু’হাজার একরেরও বেশি খাস জমি নিয়ে বিশাল সমূদ্র বেলাভুমি। এখানে রয়েছে বনবিভাগের এগারশ একর জমি নিয়ে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সমূদ্র সৈকত কুয়াকাটা থেকে মাত্র ৫ মিলোমিটার পূর্ব দিকে সমূদ্রের কোল ঘেষেই চরগঙ্গামতি। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে বালিয়াতলী হয়ে কুয়াকাটা-কলাপাড়া বিকল্প সড়কের একটি মাত্র ফেরী পাড় হয়ে চরগঙ্গামতী যাওয়া যায়।
চরগঙ্গামতি সংলগ্ন মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে শত বছরের পুরানো এশিয়ার সু-উচ্চ বৌদ্ধ বিহার।এর কাছাকাছি রয়েছে রাখাইনদের বৌলতলীপাড়া। এই পড়ায় রয়েছে অলৌকিক একটি ঘটনা। যা আজও এখানকার স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। মুন্সিগঞ্জ এলাকার এক সাপুড়ে সরদার আবদুল আলী গারুলীকে রাতে স্বপ্নে দেখেন যে, বৌলতলী রাখাইন পাড়ার উত্তর পশ্চিম পাশে ৩শ’ ৬০ টি বাশের একটি ঝাড়ের নিচে একটি সাপ রয়েছে। স্বপ্নে বলে দেয় ওই সাপ ধরার আগে দু’টি পাঠা পুঁজো করে নিতে হবে। আবদুল আলী গারুলী ওই স্বপনের কথা আর মানলেন না। সে সাপ ধরতে যায়। সাপটিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে রেগে গারুলীকে মুখে নিয়ে ৩শ’ ৬০ টি বাঁশের সঙ্গে পেচিয়ে রাখে। সাপটি যে গর্তে ছিল তা আজও কালের স্বাক্ষী হিসাবে রয়েছে।
কলাপাড়া পৌর শহর থেকে চরগঙ্গামতির দুরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার। একটি মাত্র ফেরি পাড় হয়ে যেতে হয়। অপরদিকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার দুরত্ব ও ২১ কিলোমিটার। কলাপাড়া পৌর শহর থেকে এই ২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তিনটি ফেরি পাড় হতে হয়।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে সাকুরা পরিবহন ছাড়াও বিআরটিসি পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকায় যায়। আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা।
যারা নদী পথে যেতে চান তারা ঢাকা সদরঘাট হতে পটুয়াখালীর লঞ্চে করে চলে যেতে পারেন পটুয়াখালী আর সেখানথেকে বাসে করে সোজা কুয়াকাটা। এটি সর্বাধিক আরামের ভ্রমন। কেননা ঢাকা থেকে পটুয়াখলী পর্যন্ত অন্তত একটি বিলাশবহুল আর আয়েশের ভ্রমন দিতে পারবেন। যারা কখনো লঞ্চে ভ্রমন করেননি তাদের জন্য এটি হবে একটি উল্লেখযোগ্য ভ্রমন।
আর উত্তরবঙ্গ থেকে আসতে চাইলে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে আসতে পারবেন। রাত্রের টে্রনে আসলে সকাল ৭ টার বিআরটিসি বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।
কলাপাড়া পৌর শহর থেকে চরগঙ্গামতির দুরত্ব ২১ কিলোমিটার আর কুয়াকাটা সৈকত হতে মাত্র ৫ কিলোমিটার। মোটারসাইল নিয়ে খুব সহজেই চলে যাওয়া যায় সেখানে।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
কুয়াকাটা
৫ ) লালদিয়া বন ও সমুদ্র সৈকতঃ
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে লালদিয়ার বন। সুন্দরবনের হরিণঘাটার মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে বন পার হয়ে গেলে পাওয়া যায় এই লালদিয়া। এ বনের পূর্বে বিশখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী । দুই নদী ও সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে । বন সংলগ্ন পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতটি বেশ ছোট। তবে ছোট হলেও সৌন্দর্য কোন অংশে কমতি নেই। এখানে বিভিন্ন রকমের পাখির কলকাকলি এবং সমুদ্রের গর্জন শুনে পর্যটকরা হবেন বিমোহিত এবং ফিরে আসবেন বারে বারে। এখানে সাগরের নোনা জল এসে আছড়ে পরছে বালুকাবেলায়। উড়ে যায় গাংচিল আর হাজার হাজার লাল কাকড়ার দল ছুড়ে বেড়ায় বেলাভুমিতে। সে এক নান্দনিক দৃশ্য। মনকাড়া অনুভুতি যা আপনাকে আবারও কাছে টানবে বার বার।
লালদিয়া সৈকতের পাশেই রয়েছে একটি শুটকি পল্লী। সৈকত ঘেরা লালদিয়ার চরে বছরে কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে শুঁটকি চাষ। এখানে যে শুঁটকি প্রস্তুত করা হয় তার ৯০ ভাগই হয় হাঁস-মুরগির খাদ্যের জন্য, বাকি ১০ ভাগ আমরা খাই। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শুঁটকির কারবার চলে আসছে।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা হতে সড়ক ও নৌ উভয় পথেই বরগুনা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন সকাল এবং রাতে উভয় সময় ছেড়ে যায়। দ্রুতি পরিবহন(০১১৯৬০৯৫০৩৩) সকাল সাড়ে ৮টায় এবং একই সময় রাতে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, সাকুরা পরিবহন(০১১৯০৬৫৮৭৭২, ০১৭২৫০৬০০৩৩) গাবতলী থেকে সকাল এবং রাত পৌনে ৯টায় এবং সায়েদাবাদ বাসস্টান্ড থেকে সকাল ও রাত সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যায় এছাড়াও আবদুল্লাহ পরিবহনসহ(০১৭১০৬২৫৮০৯)বেশ কয়েকটি পরিবহন ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচল করে। আপনি চাইলে নদী পথেও বরগুনা যেতে পারেন। একদিন পর পর ‘এম ভি বন্ধন-৭’(০১৮২১১৬৫৮৭৫) নামে একটি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাট নদীবন্দর থেকে বরগুনা যায়। লঞ্চই আরামদায়ক বাহন।
বরগুনা হতে ট্রলার কিংবা নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যায় লালদিয়া বনে। অথবা সুন্দরবনের হরিণঘাটা দিয়ে হেটেও যাওয়া যায় লালদিয়া বন ও সমুদ্র সৈকতে। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা হতে পারে।
কোথায় থাকবেন
আমতলী উপজেলায় ভাল মানের তেমন কোন হোটেল নেই। থাকতে হবে বরগুনা শহরে। বরগুনায় রাত্রিযাপন ব্যবস্থা খুবই ভাল। অনেকগুলি রেস্ট হাউস আছে এছাড়া আছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।
রেস্ট হাউস জেলা পরিষদ ডাকবাংলো(০৪৪৮-৬২৪১০)
খামারবাড়ী রেস্ট হাউস(০৪৪৮-৬২৪৬৯)
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস(০৪৪৮-৬২৫৫১)
এ্যাগ্রো সার্ভিস সেন্টার(০৪৪৮-৬২৭২৮)
গণপূর্ত বিভাগ(০৪৪৮-৬২৫০৫)
রেস্ট হাউস এল.জি.ই.ডি রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৪২)
সিইআরপি রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৫১)।
এছাড়া বরগুনায় আছে একাধিক আবাসিক হোটেল
হোটেল তাজবিন(০৪৪৮-৬২৫০৩)
বরগুনা রেস্ট হাউস(০১৭১৮৫৮৮৮৫৬)
হোটেল আলম(০৪৪৮-৬২২৩৪)
হোটেল বসুন্ধরা(০৭১২৬৪৫৩০০৭)
হোটেল মৌমিতা(০৪৪৮-৬২৮৪২)
হোটেল ফাল্গুনী (০৪৪৮-৬২৭৩৩)।
তবে লালদিয়া থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব মাত্র ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার। সুতরাং ইচ্ছে করলে কুয়াকাটাও থাকতে পারেন। কুয়াকাটা থাকাই সবচেয়ে উত্তম। তাতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটাও দেখা হয়ে যাবে।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
সোনাকাটা বা টেংরাগিরি বন
আমার লেখা অন্যান্য পোস্টগুলিঃ
~~~ ট্রাভেল বাংলাদেশ ~~~
কবিতা সমূহ
গল্প সমূহ
রম্য সমূহ
রহস্য / ভৌতিক / হরর গল্প সমূহ





ছবিগুলো বড় করে না দেখলে পস্তাবেন । আমাদের দেশ যে কত সুন্দর তা অকল্পনীয়







সুত্রঃ ইন্টারনেট ।